হুমায়ুন কবীর প্রিন্স
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে তিস্তার ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো।
গত দুই দিনে থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটে আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভয়াভয় ভাঙ্গন। তিস্তার ভাঙ্গনে রক্ষা পাইনি বাড়ি ভিটে, গাছ পালা ফসলী জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সোমবার (২১ জুন) দুপুর ২টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছেন। এদিকে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা আসলে বাধ ভেঙ্গে পানিতে প্লাবিত হয় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন। তাই এলাকাবাসী এবার সে পানি থেকে রক্ষা পেতে বর্ষার আগেই নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছিলেন ৪০০ মিটারের বালুর বাঁধটি।
আশা ছিল,বাঁধের কল্যাণে এ বছর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবেন। কিন্তু বন্যা আসার আগেই তাদের স্বপ্ন তলিয়ে গেল তিস্তা নদীর পানিতে। এ যেন খরার উপর মরার ঘা। পরিবারের লোকজন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করছেন এখানকার মানুষ।
উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, গত এক সপ্তাহে তিস্তা নদীর পাড়ের এ বালুর বাঁধটির প্রায় ২৫০ মিটার ধসে গিয়ে তিস্তার বুকে বিলীন হয়েছে। শুধু তাই নয় বাঁধের বাকি ১৫০ মিটার অংশেও দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এতে করে আতঙ্কে ৪৫টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বসতভিটা বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে আরও শতাধিক পরিবার।
কুটিরপাড় গ্রামের জামাল মিয়া(৪৫) জানান, আমরা নিজ উদ্যোগে নিজেদের টাকা দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করেছি। ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এক মাস ধরে কাজ করে বাঁধটি নির্মাণ কাজ চলে বর্ষার আগে সব শেষ হয়ে গেল।
একই গ্রামের গোলাম কিবরিয়া (৪০) জানান, বাঁধের যে অংশটি এখনো নদীগর্ভে চলে যায়নি, সেটি রক্ষা করা গেলে গ্রামবাসীর ভাঙন আতঙ্ক কিছুটা কমবে। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে পানি উন্নয়ন র্বোডের কর্মকতাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, জিও-ব্যাগ ফেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কয়েকবার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। তারা যথা সময়ে ব্যবস্থা নিলে এই পরিবারগুলি এমন দশা হতনা। বালুর বাঁধটি ধসে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে এখনো রয়েছে শতাধিক পরিবার।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দায় না নিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন, বালুর বাঁধটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করেছিলেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড এটির পক্ষে ছিল না। বন্যা শুরুর আগেই বাঁধটি ধসে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বালুর বাঁধটির অবশিষ্ট অংশ রক্ষায় বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি। বরাদ্দ পেলে শিগগিরই জিও-ব্যাগ ফেলে বাঁধের বাকি অংশ রক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর তালিকা করে তা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply